পরবাসী // Parabashi || অষ্টম শ্রেণি বাংলা পঠন সেতু পেজ ৬৭

 

২.১ মাঝে ঝিকিমিকি পথ’ - পথের দুধারের দৃশ্যের বর্ণনা দাও।

উ :- দু-ধারে বন—মাঝখানে আঁকাবাঁকা পথে আলোছায়ার বিচিত্র নকশা তৈরি হয়েছে। রাতের অন্ধকারে বনের মধ্যে জীবজন্তুদের চোখ জ্বলজ্বল করছে। ছোটো খরগোশের দল খেলায় মেতে আছে। পলাশের ঝোপে বনময়ূর নৃত্য করছে। সেই নৃত্যকে কবি তুলনা করেছেন কখকের সঙ্গে। নদীতে তাঁবুর ছায়া পড়ে সূর্যের সোনালি রং উদ্ভাসিত হয়েছে। অতি সন্তর্পণে হরিণেরা নদীতে জল খেতে আসে, যা কবির কাছে মৌন আহ্বানের মতো মনে হয়েছে। বন্যপ্রাণে চঞ্চলতা সৃষ্টি করে হিংস্র লোলুপ চিতা আনাগোনা করেছে।


২.২ ‘নিটোল টিলার পলাশের ঝোপে দেখেছি’ – নিটোল শব্দের অর্থ লেখো। নিটোল টিলার পলাশের ঝোপে বক্তা কী দেখেছেন ?

উ :- নিটোল শব্দের অর্থ নিখুঁত বা নিষ্কলঙ্ক ।

         নিটোল টিলার পলাশের ঝোপে বক্তা পুলকে উচ্ছাসিত বনময়ূরের কত্থক নাচ দেখেছেন ।



২.৩ “নদীর সোনালি সেতারে মিলিয়েছি তার সুষমা” – ‘নদীর সোনালি সেতার’ শব্দবন্ধ দ্বারা কবি কোন প্রাকৃতিক চিত্র এঁকেছেন? কার সুষমা সেখানে মিলেছে ?

উ :- ' সেতার’ হল— তিন তারের সুরেলা বাদ্যযন্ত্র। দীর্ঘ তারে যন্ত্রটি বাঁধা, যা নদীর স্রোতের বহমানতার প্রতি ইঙ্গিত করে। আবার সেতার যে ধ্বনি তোলে, তাও নদীর কলধ্বনির সঙ্গে তুল্য। সোনালি আলোক যেমন মনের অবসাদ দূর করে সুন্দরভাবে ব্যক্তিকে শান্ত ও প্রশমিত করে, তেমনই সেতারের সুরও তাকে মোহিত-বিমুগ্ধ করে রাখে।

        তাঁবুর ছায়ায় নদীর সোনালি সেতারে মিলিয়েছি তার সুষমা ।



২.৪ “শুনেছি সিন্ধুমুণির হরিণ – আহ্বান।“ “সিন্ধুমুণির হরিণ আহ্বান’-এর পৌরণিক প্রসঙ্গটি কবিতায় ব্যবহারের তাৎপর্য উল্লেখ করো।

উ :- কবি-মন বন-জঙ্গল, প্রান্তর, টিলা—সর্বত্রই ছুটে চলেছে। চলার আবেগে কবি নদীর কলনাদ শুনতে নদীর পাড়েও গিয়েছেন। জঙ্গলাকীর্ণ, নদীর কাছে গিয়ে কবি চিতার দুর্বার আবেগে লুদ্ধ হিংস্র ছন্দ লক্ষ করেছেন। আর সেখানেই বন্যপ্রাণীর প্রাণের বেগে কথাকলির নৃত্যের তালে সিধুমুনির আহ্বান শুনেছেন।



২.৫ ‘বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে’। ‘কথাকলি’ কী? কার চলনে কবি বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ প্রত্যক্ষ করেছেন? তুলনাটির সার্থকতা বিচার করো।

উ :- কথাকলি = কথাকলি হল কেরলের ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী। কথা ও অভিনয় এই নৃত্যশৈলীতে পরিবেশিত হয়। নৃত্যের মাধ্যমে কোনো কাহিনী বলা হয়। আর্য ও অনার্য উভয় সংস্কৃতির ছাপ আছে এই শৈলীতে। মুখোশের ব্যবহার করা হয় এই নৃত্যে।

     বনময়ূরের চলনে কবি বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ প্রত্যক্ষ করেছেন ।



২.৬ ‘জঙ্গল সাফ, গ্রাম মরে গেছে’ – এর পরিণাম সম্পর্কে কবি কীভাবে সাবধান বানী উল্লেখ করেছেন ?

উ :- উদ্ধৃতাংশটি বিষ্ণু দে-র লেখা ‘পরবাসী’ কবিতার থেকে গৃহীত হয়েছে।

    প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের অভিন্ন অংশ। পারস্পরিক সহচার্যে তারা প্রকৃতিকে সুন্দর করে তুলেছে। কিন্তু কবি বিষ্ণু দে প্রতিদিন প্রকৃতিকে একটু একটু করে ধ্বংস হতে দেখছেন। মানুষের অতিরিক্ত লোভই এর জন্য দায়ী। অরণ্য ধ্বংস হয়েছে। গ্রাম নষ্ট করে নগর তৈরি হলেও আদর্শ শহর গড়ে ওঠেনি, যেখানে সকলের স্থান হয়। পৃথিবীর আবহাওয়া ক্রমাগত বিষাক্ত হয়ে উঠছে। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে মানুষ বন্যপ্রাণীদের পণ্যে পরিণত করেছে। সভ্যতার আগ্রাসনে নদী, পাহাড়, গাছ লুপ্ত হয়ে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা কবির হৃদয়কে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। এইভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বোঝাতে কবি আলোচ্য পঙক্তিটির অবতারণা করেছেন। এই পঙক্তিটির উপজীব্যই হল—প্রকৃতিও মানুষ একে অপরের পরিপূরক।



২.৭ ‘পরবাসী কবে নিজবাসভূমি গড়বে?’ কবি কাদের কেন পরবাসী বলেছেন? তাদের নিজস্ব বাসভূমি তৈরির অর্থ কী?

উ :- পরবাসী কবিতাটি কবি বিষ্ণু দের ‘তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

কবি এইদেশের মানুষ জন , নদী, গাছ , পাহাড় কে পরবাসী বলেছেন ।

   কারণ কোথাও বন নেই, বসতি ও নেই। শুধু ধুধু প্রান্তরে শুকনো বাতাসের হাহাকার। গভীর অরণ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। গ্রামগুলি যেমন প্রাণহীন হয়ে হারিয়ে গেছে তেমনি শহরও গড়ে ওঠেনি। প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারী পক্ষীরাজ ময়ূর আজ পণ্যদ্রব্যে পরিণত হয়েছে। তাই কবির প্রশ্ন, এদেশের মানুষ নীরব অসহায় কেন? নদী গাছ পাহাড় গুরুত্বহীন বা গৌন কেন? কবি আর কতদিন সারাদেশ ময় অস্থায়ীভাবে ঘুরবেন? তাই আবার কবির জিজ্ঞাসা পরবাসী মানুষ কবে নিজের স্থায়ী বাসভূমি করে তুলবে।



২.৮ “জঙ্গল সাফ”. তোমার আশেপাশের পরিবেশে জঙ্গল বা গাছপালা ধ্বংস হতে দেখেছ বা দেখেছ। ‘সবুজ ধ্বংস’ তোমাকে কীভাবে নাড়া দেয় তা উল্লেখ করো।



২.৯ বিরামচিহ্ন ব্যবহারের দিক থেকে ‘পরবাসী’ কবিতাটির শেষ স্তবকের বিশিষ্টতা কোথায়? এর থেকে কবি-মানসিকতার কী পরিচয় পাওয়া যায় !

উঃ- বিষ্ণু দে-র ‘পরবাসী’ কবিতাটির শেষ স্তবকের চারটি বাক্যে কবি চারটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন ব্যবহার করেছেন, যা কবিতাটিকে বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

বিরামচিহ্নের ব্যবহার ভাষার একক বাক্যের স্বরূপকে নির্দেশ করে। আবার এর মাধ্যমে কবি কাব্যালংকার, বিশেষ করে, শ্লেষ অলংকারের প্রয়ােগ করেন। ‘পরবাসী’ কবিতার শেষ স্তবকে সেই কাব্যালংকারের বিশিষ্ট প্রয়ােগ লক্ষ করা যায়। কবি যেন তির্যক, তীক্ষ্ণ প্রশ্নের কশাঘাতে মানুষের, বিশেষত ব্যাবসাজীবী, মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। সভ্যতার আগ্রাসনে পৃথিবীর নদী, পাহাড়, গাছ লুপ্ত হচ্ছে। বনবাসী প্রাণীরা হারিয়ে যেতে বসেছে। নিজের দেশেই মানুষ উদ্বাস্তুর মতাে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছে। তারা স্থায়ী স্বাভাবিক, চিরপ্রত্যাশিত নিজস্ব বাসস্থান গড়ে তুলতে পারে না। কবি এখানেই প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে পেতে আগ্রহী। শেষ স্তবকে কবির একাধিক প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে আমরা তাঁর বন্যপ্রাণ, বণ্যপ্রাণী তথা প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় ।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post